অনেকদিন পর এক ছাত্রের সাথে তার শিক্ষকের সাক্ষাৎ হল। ছাত্রটিও আজ একজন শিক্ষক হয়েছে। সে তার শিক্ষককে বলল, আপনার অনুপ্রেণাতেই আমি শিক্ষক হয়েছি।
শিক্ষক ঠিক বুঝতে পারল না, সে কবে কাকে অনুপ্রেরণা দিল!
তখন ছাত্রটি তাকে একটি ঘটনা মনে করিয়ে দিল–
স্যার, আপনার মনে থাকার কথা, একবার আমাদের এক সহপাঠীর একটি দামি ঘড়ি চুরি হয়েছিল। সেই সহপাঠী কাঁদতে কাঁদতে আপনাকে নালিশ করল। আপনি ক্লাসে এসে বললেন, যে ঘড়িটি নিয়েছ দিয়ে দাও। আমি ঘড়িটির লোভ সামলাতে পারিনি বলে দিইনি। তখন আপনি সব ছাত্রকে ক্লাসরুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং সবাইকে চোখ বন্ধ করে দেয়ালের দিকে মুখ করে দাঁড়াতে বললেন। তারপর একজন একজন করে সবার পকেট চেক করতে থাকলেন। আমি লজ্জা আর ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। কারণ ঘড়িটি ছিল আমার পকেটে।
একসময় আমার পালা এলো। আমি অনুভব করলাম আপনি আমার পকেট থেকে ঘড়িটি বের করছেন। কিন্তু আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আপনি কিছু বলছেন না এবং বাকী ছাত্রদের পকেট অনুসন্ধান করে চলেছেন।
তারপর যখন অনুসন্ধান শেষ হল, আপনি আমাদের চোখ খুলতে বললেন এবং সবাইকে বসতে বললেন। ভয়ে আমি বসতে পারছিলাম না, কারণ আমার মনে হচ্ছিল একটু পরেই হয়ত আপনি আমাকে ডাকবেন এবং শাস্তি দিবেন। কিন্তু আপনি তা না করে ঘড়িটি সবাইকে দেখালেন এবং আমার সেই সহপাঠীকে ফেরত দিলেন।
ঘড়িটি যে চুরি করেছে তার নাম আপনি আর কখনও কাউকে বলেননি। আপনি আমাকে একটি কথাও বলেননি, এবং কখনও কারও কাছে গল্পটি উল্লেখও করেননি। স্যার, আপনি সেদিন আমার সম্মান রক্ষা করেছিলেন।
এরপর আমি ভাবলাম আমি চোর হব না, আমি একজন শিক্ষক হব। আপনার মত শিক্ষক। যে ছাত্রদের লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যের সম্মান কীভাবে রক্ষা করতে হয় সেটাও শেখাবে।
আপনি কি ঘটনাটি মনে করতে পারছেন স্যার? এই ঘটনা আপনার ভোলার কথা না।
শিক্ষক জবাব দিলেন, ঘটনাটি আমি খুব ভালভাবেই মনে করতে পারছি। কিন্তু কার পকেট থেকে ঘড়িটি পাওয়া গিয়েছিল সেটি আমি আজও জানিনা। কারণ যখন আমি সবার পকেট চেক করছিলাম তখন আমি ইচ্ছে করেই তোমাদের মত নিজের চোখও বন্ধ করে রেখেছিলাম। যাতে আমিও জানতে না পারি যে চুরিটি ঠিক কে করেছিল। এভাবে আমি আমার ছাত্রের সম্মান আমার কাছেও অক্ষুন্ন রেখেছিলাম।