মুসলিম বিজ্ঞানীদের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা

মুসলিম বিজ্ঞানীদের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা

একটা সময় মুসলিম বিজ্ঞানীদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার পৃষ্ঠপোষকতা করতেন মুসলিম শাসকেরা। খলিফা মামুন জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীদের একটি দল তৈরি করেছিলেন। তারা গ্রীকদের জ্ঞান-বিজ্ঞানমূলক বইগুলো অনুবাদ করতেন এবং সেগুলো নিয়ে পুণরায় গবেষণা করতেন।

মুসলিম শাসকরা বিজ্ঞানীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের জন্য গবেষণাগার নির্মান করতেন এবং গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ব্যবস্থাও করে দিতেন। খলিফা মামুন জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণার জন্য বাগদাদে মানমন্দির তৈরি করে দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শাসক বিজ্ঞানীদের জন্য মানমন্দির তৈরি করে দিতেন। এর মধ্যে বিখ্যাত কিছু মানমন্দির হল :
ইরানের মারাগিতে নাসিরুদ্দিন আত-তুসির মানমন্দির, সিরিয়ায় ইবনে শাতিরের মানমন্দির, সমরকন্দে উলুগ বেগের মানমন্দির, ইরানের শারফুদ্‌দাওলার মানমন্দির, কায়রোর আল হাকিমি মানমন্দির ইত্যাদি। এগুলো ছিল গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দ্বারা সমৃদ্ধ।

মানমন্দির হল জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণাগার। যাকে আমরা আধুনিক যুগে Astronomical Observatory বলে থাকি। এই মানমন্দির তথা Observatory গুলোতে জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে সবরকম গবেষণা হতো।

এসব গবেষণাগার এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মুসলিম বিজ্ঞানীরা জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিশেষ উৎকর্ষ সাধন করেছিলেন।

যেমন : আল বাত্তানি সেসময়ই গবেষণা করে বের করেন এক সৌরবৎসরে ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড হয়। যা আধুনিক পরিমাপের চাইতে মাত্র ২ মিনিট ২২ সেকেন্ড কম।

আব্দুর রহমান আস-সুফি (Azophi নামে পরিচিত) বিশ্বের প্রথম স্থীর তারকারাজির সারণি তৈরি করেন। এ বিষয়ে তিনি ‘সুওয়ারুল কাওয়াকিবিস সাবিতাতি (Book of Fixed Stars)’ নামে একটি গ্রন্থও রচনা করেন। এতে তিনি ১ হাজারেরও বেশি তারকার অবস্থান ও গতিময়তার ইতিহাস চিত্র সহ বর্ণনা করেন। তার কীর্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানীরা চাঁদের আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ ‘আযোফি’ নামে নামকরণ করেন।

এভাবে মুসলিম বিজ্ঞানীরা আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন সাফল্য মণ্ডিত, গর্বিত এবং বিস্তৃত এক ইতিহাস। ইতিহাসগুলো আমাদের চর্চা করা উচিত।

তথ্যসূত্র : মুসলিমজাতি বিশ্বকে কী দিয়েছে – ড. রাগিব সারাজানি।

ছবিতে ইরানের মারাগিতে অবস্থিত নাসিরুদ্দিন আত-তুসির নির্মিত মানমন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যাচ্ছে। এটি ছিল সেই সময়কার সবচেয়ে বড় এবং সমৃদ্ধ মানমন্দির। এটির ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষনের জন্য এটিকে গম্বুজ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *