১৭ হিজরী সালে সিরিয়াতে ‘আমওয়াস মহামারি’ এর প্রাদুর্ভাব ঘটে। চারদিকে রােগ গুরুতরভাবে ছড়িয়ে পড়ে, আক্রান্ত লােকজনের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠে। সেসময় সিরিয়ায় অভিযানে অবস্থান করছে মুসলিমদের একটি দল। নেতৃত্বে আছেন সেনাপতি আবু উবায়দা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু।

খলীফা উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন এই রোগ সম্পর্কে জানতে পারলেন তখন তিনি আবু উবায়দাকে সেখান থেকে বের করে আনতে চাইলেন। তিনি সেনাপতি আবু উবায়দার কাছে চিঠি লিখলেন –

“সালামুন আলাইকা, পর সংবাদ, আপনার সাথে আমার একটি জরুরী প্রয়ােজন রয়েছে। আমি চাই যে, আপনার সাথে মুখােমুখি আলাপ করি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই চিঠি দেখার পর মুহূর্ত কালবিলম্ব না করে চিঠি হাত থেকে রাখার আগেই আপনি মদীনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন।”

চিঠি পাঠ করে আবু উবায়দা বুঝতে পারলেন এই মহামারী এলাকা থেকে তাকে বের করে নেওয়াই আমীরুল মু’মিনীনের উদ্দেশ্য। তাই তিনি এই কৌশল অবলম্বন করেছেন।

একজন সুযোগ্য নেতা কখনই তার অধিনস্ত লোকদের ফেলে নিরাপদে থাকতে চায় না। আবু উবায়দাও তাই করলেন। তিনি চিঠি লিখলেন খলীফার কাছে –

“মহান আল্লাহ আমীরুল মু’মিনীনকে ক্ষমা করুন। হে আমীরুল মুমিনীন! আমার সাথে আপনার কী প্রয়ােজন তা আমি উপলব্ধি করেছি। আমি তাে একদল সৈন্যের মধ্যে আছি। ওদেরকে বাদ দিয়ে আমি শুধু আমার কল্যাণের কথা ভাবতে পারছি না। আমার এবং ওদের ব্যাপারে মহান আল্লাহর চুড়ান্ত ফয়সালা ছাড়া আমি ওদেরকে ছেড়ে যেতে পারব না। সুতরাং আপনার যা ইচ্ছা তা থেকে আমাকে বাদ দিন। আমাকে আমার সাথী সৈন্যদের সাথে থাকতে দিন।”

খলীফা উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু আবু উবায়দার চিঠি পড়ে কাঁদতে লাগলেন। লােকজন বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন! কাঁদছেন কেন, আবু উবায়দা কি মারা গেছেন? খলীফা বললেন, না, মারা যায়নি। তবে যেন মারা যাবার পথে!

এরপর আবু উবায়দার কাছে উমার চিঠি লিখলেন কিছু পরামর্শসহকারে। তিনি আবু উবায়দাকে পরামর্শ দিলেন তিনি যেন তার লোকজন সহ দূরে রোগমুক্ত এবং উচু কোনো অঞ্চলে চলে যান। পরামর্শ মোতাবেক আবু উবায়দা লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার পথেই রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান। রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা।

সত্যই আল্লাহর রসুল ﷺ -এর সাহাবীরা আল্লাহর রায়ের উপরে সন্তুষ্ট ছিলেন আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলাও তাদের প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন।
[আল বিদায়া ওয়ান্নিহায়া]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *