শত্রু থেকে মিত্র

শত্রু থেকে মিত্র

একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাজদের দিকে কিছু সৈন্য পাঠালেন। তারা ছুমামাহ বিন উছাল নামে এক ব্যক্তিকে ঘরে আনল। সে ছিল ইয়ামামাবাসীদের সরদার। তাঁরা তাকে মসজিদে নববীর একটি খুঁটির সাথে আটকে রাখল।

রাসূল ﷺ তার কাছে আসলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ওহে ছুমামাহ! তুমি কি মনে করছ?
সে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ! আমার ধারণা ভালই। যদি আপনি আমাকে হত্যা করেন, তাহ’লে অবশ্যই আপনি একজন খুনিকে হত্যা করবেন। আর যদি আপনি অনুগ্রহ করেন, তাহ’লে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপরই অনুগ্রহ করবেন। আর যদি আপনি সম্পদ চান, তাহ’লে যা ইচ্ছা চাইতে পারেন, তা আদায় করা হবে’।

তার কথা শুনে রাসূল ﷺ তাকে সেদিনের মত তার নিজের অবস্থার উপর ছেড়ে দিলেন।

পরের দিন রাসূল ﷺ তাকে আবার একই কথা জিজ্ঞেস করলেন।
ছুমামাহ একই জবাব দিল।
রাসূল ﷺ তাকে পূর্বের ন্যায় তার অবস্থার উপর ছেড়ে দিলেন।

এর পরের দিনও রাসূল ﷺ তাকে আবারও একই কথা জিজ্ঞেস করলেন।
এদিনও ছুমামাহ একই জবাব দিল।

এবার রাসূল ﷺ সাহাবীদের তাকে ছেড়ে দিতে বললেন।

ছুমামাহ ছাড়া পেয়ে মসজিদের নিকটবর্তী একটি খেজুর বাগানে গোসল করল। তারপর সে মসজিদে নববীতে ফিরে এসে বলে উঠল :

‘আশহাদু আললা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু’।

এরপর ছুমামাহ বলল—
হে মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহ্‌ কসম! পৃথিবীর বুকে আপনার চেহারা অপেক্ষা আর কারও চেহারা আমার নিকট অধিক ঘৃণিত ছিল না। কিন্তু এখন আপনার চেহারা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় হয়ে গেছে।
আল্লাহ্‌ কসম! আপনার দ্বীন অপেক্ষা অধিক অপ্রিয় দ্বীন আমার কাছে আর কোনটিই ছিল না। কিন্তু এখন আপনার দ্বীনই আমার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় হয়ে গেছে।
আল্লাহ্‌ কসম! আপনার শহরের চেয়ে অধিক ঘৃণিত শহর আর কোনটিই আমার কাছে ছিল না। কিন্তু এখন আপনার শহরটিই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় হয়ে গেছে।

আপনার অশ্বারোহীরা আমাকে এমন অবস্থায় ধরে এনেছে, যখন আমি ওমরাহ করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলাম। এখন আপনি আমাকে কি করতে হুকুম দিচ্ছেন?

রাসূল ﷺ তাকে সুসংবাদ শুনালেন এবং ওমরাহ পালনের আদেশ করলেন। এরপর যখন তিনি মক্কায় পৌছলেন, তখন জনৈক ব্যক্তি তাকে বলল, তুমি না কি বেদ্বীন হয়ে গেছ? তিনি জওয়াবে বললেন, ‘তা হবে কেন; বরং আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আর আল্লাহ্‌ কসম! রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অনুমতি ছাড়া তোমাদের কাছে ইয়ামামা হ’তে আর একটি গমের দানাও আসবে না’

এই প্রসিদ্ধ হাদিসটি বুখারি মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *