সাহসী সাহাবিয়্যাহ

সাহসী সাহাবিয়্যাহ

উহুদ যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে সাহাবিরা দিশেহারা। তাঁরা এদিক-ওদিক ছুটে চলেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেকটা একা হয়ে গেলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে একজন নারী হাতে একটি নিযা (বর্শা) নিয়ে সাহাবিদেরকে বললেন—
“তোমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে রেখে পালাচ্ছো?”

তিনি কে ছিলেন? এতোটা দাপটের সাথে তিনি কীভাবে সাহাবিদের সাথে কথা বলেন?

তিনি ছিলেন সাফিয়্যাহ বিনতে আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহা, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আপন ফুফু।

তাঁর আরেকটি পরিচয় হলো তিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত বীর সাহাবি যুবাইর ইবনুল আউয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মা।

খন্দক যুদ্ধে মুসলিম মহিলাদেরকে একটি দূর্গে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। সেই দূর্গে মুসলিম মহিলাদের সাথে ছিলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কবি হাসসান বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি যুদ্ধে যেতেন না। রাসূলুল্লাহ ﷺ এটা জানতেন। ফলে তাঁকে রাখা হয় নারীদের দূর্গে। সেই দূর্গে ছিলেন সাহসী সাফিয়্যাহ বিনতে আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহা।

একদিন সাফিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা দেখলেন যে, এক গুপ্তচর দূর্গের আশেপাশে ঘুরছে। এটা নিরাপত্তার প্রশ্ন। যদি সে জানতে পারে যে, এখানে সবাই মহিলা, তাদেরকে রক্ষা করার জন্য কোনো যোদ্ধা নেই, তাহলে তো বিপদ।
সাফিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা হাসসান বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, “তাকে হত্যা করো। নতুবা আমাদের তো বিপদ হবে।”

হাসসান বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু নিরাপত্তার প্রশ্নেও ছিলেন অনেকটা নির্বিকার। তিনি বললেন, “আপনি জানেন যে, আমার কাছে এর কোনো প্রতিকার নেই। যদি থাকতো, তাহলে তো আমি রাসূলের ﷺ সাথে যুদ্ধে থাকতাম!”

সাফিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা দেখলেন হাসসানকে বলে কোনো লাভ হবে না। তিনি নিজেই তাঁবুর একটি খুঁটি হাতে নিয়ে গুপ্তচরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং গুপ্তচরকে হত্যা করতে সক্ষম হোন। গুপ্তচরেরর কাটা মাথা তিনি দূর্গের ওপারে ছুঁড়ে মারেন। ফলে দূর্গের বাইরে থাকা ইহুদিরা ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তারা ধারণা করে যে, ভেতরে মনে হয় মুসলিম যোদ্ধারা আছে!

সাফিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলতেন যে, “আমিই প্রথম মহিলা, যে একজন পুরুষকে হত্যা করেছি।”

[সিয়ারু আ’লাম আন-নুবালা : ২/২৭০]

সাফিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা এর আরেকটি পরিচয় হলো তিনি একজন কবি ছিলেন। তাঁর ভাই হামযা রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর ভাইপো রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের পর তিনি বেশ কয়েকটি শোকগাথা কবিতা লিখেন।

খলিফা উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর খিলাফতকালে তিনি ইন্তেকাল করেন। খলিফা তাঁর জানাযার নামাজ পড়ান।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *